শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি বাংলাভাষা ও সাহিত্যের কোন যুগের নিদর্শন? কাব্যটির রচয়িতা শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের কাব্যবৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে।

● ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি বাংলাভাষা ও সাহিত্যের আদিমধ্যযুগের একমাত্র সাহিত্যিক নিদর্শন। 
● কাব্যটির রচয়িতা বড়ু চণ্ডীদাস।

শ্রীকৃম্নকীর্তনের কাব্যবৈশিষ্ট্য:
১) তেরােটি খণ্ডে রচিত “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ বাংলা সাহিত্যে রাধাকৃয়কথার প্রথম আখ্যান কাব্য। জন্মখণ্ডে দেবতাদের প্রার্থনায় ভূভার হরণের জন্য রাধাকৃয়ের আবির্ভাব, আর রাধাবিরহে কৃয়ের মথুরাগমনে রাধার আক্ষেপযন্ত্রণায় কাহিনি সমাপ্ত হয়েছে।
২) শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের আঙ্গিকগত বৈশিষ্ট্য অভিনবত্বের দাবি রাখে। গীতিনাট্য-বিবৃতির সমন্বয়ে রচিত এই কাব্যের শেষে রাধার হৃদয়ার্তিতে গীতিময়তা, পূর্ববর্তী বংশীখণ্ডে ‘কেনা বাঁশি বাত্র বড়ায়ি’-তে গীতিরসের উচ্ছ্বসিত প্রবাহ; আবার রাধা-কৃয়-বড়ায়ির উক্তি-প্রত্যুক্তিতে নাটকীয় চরিত্র-লক্ষণের প্রকাশ।
৩) ধর্মাশ্রয়ী কাহিনী হলেও তুর্কি-আক্রমণের প্রভাবজাত লৌকিকতার আভাস রয়েছে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে। তাই বড়ুচণ্ডীদাসের কৃয় দৈবী প্রচ্ছদ ছিন্ন করে নিতান্তই এক ‘আভীর’ যুবক, যে অনায়াসে বলতে পারে—“রাধাক না পাআঁ মাের বেআকুল মনে।” রাধাও ক্রমশ লৌকিক সংস্কারকে অস্বীকার করে হয়ে উঠেছে পরকীয়া প্রেমে অভ্যস্ত এক রমণী। আর বড়ায়ি রাধা-কৃয়ের পরকীয়া প্রেমে দূতীয়ালি করা এক গ্রাম্য কুট্টিনী চরিত্র।
৪) আদিমধ্যযুগের সমাজচিত্রের বিশ্বস্ত দলিল শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য। রাধার আয়ানের সংসার করার মধ্যে বাল্যবিবাহের নজির আছে। বিভিন্ন পেশার মানুষের পরিচয় শ্রীকৃয়কীর্তনে আছে, যেমন—কুমাের, তেলি ইত্যাদি—“মাের মন পােড়ে যেহু কুম্ভারের পনী।” জনজীবনের অজস্র সংস্কারের নিদর্শনও শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে আছে।
৫) আদিমধ্যযুগে সৃষ্ট হওয়া নব্যবাংলার বিশিষ্ট লক্ষণগুলাে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনেই পাওয়া যায়। যেমন—সর্বনামে কর্তৃকারকে রা’ বিভক্তি যােগ, ভবিষ্যতের কর্তৃবাচ্যে ইব’ অন্ত ক্রিয়ার ব্যবহার ইত্যাদি। এইভাবে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ আদিমধ্যযুগের সাহিত্য নিদর্শন হিসেবে বিষয়-আঙ্গিক ও ভাষাগত অজস্র বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল হয়ে আছে।

Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box