মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের জন্য ঔরঙ্গজেব কতটা দায়ী ছিলেন?
সূচনা: মুঘল সাম্রাজ্যের পতন মূলত আওরঙ্গজেবের শাসনামলের নীতি-আচরণ এবং তাঁর উত্তরসূরিদের দুর্বলতার কারণে ঘটেছিল। আওরঙ্গজেবের সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য নেওয়া পদক্ষেপ, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, এবং দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ফলে সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তাঁর উত্তরসূরিরা সেই দুর্বলতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল, যার ফলে মুঘল সাম্রাজ্য ধীরে ধীরে ভেঙে গিয়েছিল. আওরঙ্গজেবের অবদান:
ঔরঙ্গজেবের দায়িত্ব ---
[1] অনুদার ধর্মনীতি: সুন্নি মুসলমান ঔরঙ্গজেবের অনুদার ধর্মনীতি, অ-মুসলমান সম্প্রদায় (জাঠ, সৎনামি, বুন্দেলা, শিখ) এমনকি মুসলিমদের শিয়া সম্প্রদায়কেও ক্ষুদ্ধ করে তুলেছিল। যার ফলে তারা ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করে।
[2] ভ্রান্ত দাক্ষিণাত্যনীতি: ঔরঙ্গজেবের বিজাপুর ও গােলকোন্ডা রাজ্যগ্রাস মুঘল সাম্রাজ্যের পক্ষে শুভ হয়নি। আবার মারাঠাদের সঙ্গে দীর্ঘ ২৫ বছর যুদ্ধে লিপ্ত থাকার ফলে উত্তর ভারতে সম্রাটের দীর্ঘদিন অনুপস্থিতি সাম্রাজ্যের পতনকে অবশ্যম্ভাবী করে তােলে।
[3] অদূরদর্শী রাজপুত নীতি: আকবরের আমলে যে রাজপুতরা ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের স্তম্ভম্বরূপ, সেই রাজপুতরাই ঔরঙ্গজেবের অদূরদর্শিতার জন্য মুঘলদের শত্রুতে পরিণত হয়। যুদ্ধবিশারদ রাজপুতদের সাহায্য না পাওয়ায় মুঘল সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে ও সাম্রাজ্যের পতন রােধে ব্যর্থ হয়।
[4] মারাঠা দমনে ব্যর্থতা: শিবাজির নেতৃত্বে মারাঠাদের উত্থান রােধে ঔরঙ্গজেব ব্যর্থ হন। মুঘলদের বিরুদ্ধে প্রথমে শিবাজি, প্রবর্তী সময়ে শম্ভুজি, তারপর রাজারাম, আরও পরে রাজারামের বিধবা পত্নী তারাবাঈয়ের সংঘর্ষ বাধে। এই মারাঠা-মুঘল দীর্ঘ সংঘর্ষ মুঘল সাম্রাজ্যের সংহতিকে বিনষ্ট করে।
উপসংহার: আওরঙ্গজেবের নীতি এবং তাঁর উত্তরসূরিদের দুর্বলতা মুঘল সাম্রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করেছিল। আওরঙ্গজেব সাম্রাজ্যকে শক্তিশালী করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর কিছু পদক্ষেপ, যেমন- ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং দীর্ঘ যুদ্ধ, সাম্রাজ্যকে দুর্বল করে দিয়েছিল। তাঁর উত্তরসূরিদের দুর্বলতা এবং অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার লড়াই সাম্রাজ্যের পতনকে আরও ত্বরান্বিত করেছে.
যায়।