ইলিয়াস’ গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করাে।
উঃ সাহিত্যে নামকরণ বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। নামকরণের মধ্য দিয়েই রচয়িতার মূল উদ্দেশ্যটি স্পষ্ট হয় পাঠকের কাছে। যে কোনাে রচনার ক্ষেত্রে নামকরণ হয়ে থাকে কোনাে বিষয়, ঘটনা, ব্যক্তি বা ভাবের ভিত্তিতে। আলােচ্য ইলিয়াস’ গল্পের নামকরণ ব্যক্তি বা চরিত্রকেন্দ্রিক।
এই গল্পের কাহিনি ইলিয়াসকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। অতি দরিদ্র মানুষ ইলিয়াস কঠোর পরিশ্রম ও সুব্যবস্থাপনা গুণে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হয়। পঁয়ত্রিশ বছরের নিরলস পরিশ্রম, সততা ও অর্জিত সুনামে ইলিয়াসের নাম দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে তার বাড়িতে বহু অতিথি আসত। তাদের সেবাযত্নে কোনাে ত্রুটি হতাে না। আর ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এই ইলিয়াস একদিন সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে। তখন সে প্রতিবেশী মহম্মদ শা-র বাড়িতে দিনমজুরের কাজ পায়। এই সময় ইলিয়াস উপলব্ধি করে দীর্ঘ পাশ বছরের বিলাসী জীবনেও যে সুখ সে ও তার স্ত্রী পায়নি, আজ দিনমজুরের জীবনের দীনদশায় সেই সুখের সন্ধান পায় তারা। আসলে এসময় ইলিয়াস প্রকৃত জীবনসত্যের মুখােমুখি হয়। স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই সম্পত্তির মােহে অন্ধ ছিল বলেই তাদের সম্পত্তি, প্রতিপত্তি স্থায়ী হয়নি। আর দিনমজুরের জীবনেই তারা প্রকৃত জীবনদর্শন ও সত্যের দেখা পায়। নিজের জীবন থেকে অর্জিত শিক্ষা তখন ইলিয়াস অতিথিদের দিয়েছে। পাঠক-হৃদয়েও এটা একটা দৃষ্টান্ত হয়ে রইল। বাবার মৃত্যুর পর শুরু হয়েছিল ইলিয়াসের জীবনসংগ্রাম। আবার ধনী থেকে সর্বস্বান্ত হয়েও ফের শুরু হলাে নয়া জীবনসংগ্রাম। বার বার জীবনসংগ্রাম ও জীবন থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতায় ইলিয়াস পেয়েছে নয়া জীবনদর্শন। আর গােটা গল্পেই ইলিয়াস আর তার কর্মতৎপরতার নিদর্শন। তাই সবদিক বিচার করে বলা যায় গল্পের ‘ইলিয়াস’ নামকরণ সার্থক ও তাৎপর্যবাহী।