“উঠে কত হলাহল, উঠে কত সুধা!” – হলাহল’ ও সুধা’ কী? তারা কোথা থেকে ! ওঠে? তারা কীভাবে পৃথিবীর ইতিহাস রচনা করে?

উঃ মানবসভ্যতার শাশ্বত প্রবাহের যথার্থ স্বরূপটি উদ্ঘাটিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রণীত 'খেয়া' কবিতার ছােটো পরিসরে। ইতিহাস সচেতন কবি সভ্যতার বিবর্তন
“উঠে কত হলাহল, উঠে কত সুধা!” – হলাহল’ ও সুধা’ কী? তারা কোথা থেকে ! ওঠে? তারা কীভাবে পৃথিবীর ইতিহাস রচনা করে?

উঃ মানবসভ্যতার শাশ্বত প্রবাহের যথার্থ স্বরূপটি উদ্ঘাটিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রণীত 'খেয়া' কবিতার ছােটো পরিসরে। ইতিহাস সচেতন কবি সভ্যতার বিবর্তন ধারাটি অনুপুঙ্খরূপে পর্যবেক্ষণ করেছেন, হিংসার উন্মত্ততায় এই ধরণীতল কখনাে রক্তাক্ত হয়েছে, আবার মানবেরই পুণ্যকর্মে জীবনের পাত্রখানি ভরে উঠেছে। শুভ চেতনায় ভর করে মানুষ এ জগৎসংসারকে ভরিয়ে দিয়েছে সুধারসে। আবার এই মানুষই ক্রোধাচ্ছন্ন হয়ে, ঈর্ষায় অন্ধ হয়ে হলাহল উত্তোলন করেছে – ইতিহাসের অধ্যায় ভরে উঠেছে জীবনের গ্লানিতে। 
সংস্কৃত কথাসাহিত্যের ভাণ্ডার থেকে আহূত বলে পৌরাণিক প্রসঙ্গকে কবি সাবলীলভাবে কবিতায় ব্যবহার করেছেন। সমুদ্রমন্থনে হলাহল ও সুধা দুই-ই উঠেছিল। হলাহল হলাে বিষ, আর সুধা' হলাে অমৃত দেবকুলের অস্তিত্ব যেমন সংকটে আর সেই সংকট মর্তমানবের ক্ষেত্রেও সমরূপে প্রযােজ্য। রবীন্দ্রনাথ সভ্যতার সংকট থেকে মানবের পরিত্রাণের পথরেখা নির্দেশ করে দিয়েছেন।

অধ্যাত্ম সাধনায় জারিত হয়ে রবীন্দ্ৰহৃদয় খুঁজে পেয়েছে অনন্তকালের মানবপ্রবাহের স্বরূপটিকে; সেখানে তিনি দেখেছেন সভ্যতার দুই বিপ্রতীপ রূপকে, দেখেছেন ধ্বংস আর সৃষ্টির সম্ভারকে। সেই অমৃত আর হলাহল ধারণ করে নির্বিকার চিত্তে অবিচল থেকে মানবসভ্যতা এগিয়ে চলেছে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে। নবীনের বােধন ঘটেছে, বিসর্জিত হয়েছে পুরাতন; জীবনের ঘর থেকে কেউ ছুটি নিয়েছে চিরকালের তরে আবার কেউ সদ্য ফিরেছে আপনার ঘরে নিত্য এই চলাচলই হলাে মানবসভ্যতার সারকথা।
Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box