“পৃথিবীতে কত দ্বন্দ্ব, কত সর্বনাশ” – দ্বন্দ্ব’ও সর্বনাশ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? এই দ্বন্দ্বও সর্বনাশ পৃথিবীতে কীসের ভূমিকা পালন করেছে?তার সঙ্গে খেয়ানৌকার যােগ কোথায় ?
উঃ সভ্যতার বিবর্তনের বিস্তৃত ইতিহাস লক্ষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যুগ-যুগান্তরের মানুষের বিচিত্র কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছেন; দেখেছেন হিংসায় মত্ত মানুষ দ
উঃ সভ্যতার বিবর্তনের বিস্তৃত ইতিহাস লক্ষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যুগ-যুগান্তরের মানুষের বিচিত্র কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছেন; দেখেছেন হিংসায় মত্ত মানুষ দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে বারবার ডেকে এনেছে সর্বনাশ। ইতিহাসের ধূসর অতীতে পদচারণায় কবিমন খুঁজে পেয়েছে বিস্তৃত অতীত জুড়ে হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বীতলকে – জনপদের পর জনপদ শূন্য, সর্বহারা। সর্বনাশের সে আগুনের লেলিহান শিখায় ভস্মীভূত হয়েছে মানবসভ্যতা। জীবনের প্রসাদে আহ্লাদিত কবি সেই অমরত্বের বাসনাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। দুই তীরে দুইখানি গ্রাম নিয়ে নদী বয়ে চলেছে যুগ-যুগান্তর ধরে। খেয়াতরিতে পারাপার করে যাত্রীদল গ্রাম দু’টির মধ্যে যােগসূত্র রচনা করেছে। তাদের সম্বন্ধ নিবিড়, গভীর – সেই খেয়াঘাটের কূলে নেই কোনাে দ্বন্দ্ব, নেই ঈর্ষা, হানাহানি। নাগরিক জীবনের রক্তক্ষয়ী সর্বনাশ-ধ্বংসের ঢেউ আছড়ে পড়ে না দূর নদীতটের এই শাশ্বত জীবনের উঠোনে। ইতিহাসের ওঠাপড়া দোলায় না সে সভ্যতাকে। ইতিহাসের দোলাচলে উদাসীন থেকে গ্রাম দুটির মাঝে এই খেয়া পারাপার চলে নীরবে। দ্বন্দ্ব-বিক্ষুব্ধ জীবন থেকে শান্ত, নিরীহ, নিস্তরঙ্গ জীবনকে আগলে রাখে খেয়াতরি, মানবসভ্যতার যাত্রাপথকে সুনিশ্চিত করে, জুড়ে দেয় দু’পাড়কে।