স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন কোনটি ? এই কমিশনের সুপারিশ অনুসারে উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

উত্তরঃ স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন হলাে রাধাকৃষ্ণন কমিশন। 1948 খ্রিস্টাব্দের 5 নভেম্বর এই কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনের অপর নাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন।

রাধাকৃষ্ণন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যগুলি নিম্নরূপ
1) বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় গড়ে তােলার দায়িত্বগ্রহণ : বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিদের গড়ে তােলার দায়িত্ব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নিতে হবে। বৈজ্ঞানিক, সাহিত্যিক, প্রযুক্তিবিদ, যােগ্য রাজনীতিক, সুচিকিৎসক প্রভৃতি পেশায় দক্ষ কমিশন।
অর্থাৎ দেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে গড়ে তুলবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি।

2) রাষ্ট্রের উপযােগী শিক্ষাব্যবস্থা : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সাফল্য স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, ন্যায়বিচার ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। সবাই যাতে শিক্ষাক্ষেত্রে সমান সুযােগসুবিধা পায়, সরকারের কর্তৃত্ব কমে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বশাসন, শিক্ষানুরাগীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সচেতন হওয়া ও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

3) চরিত্র গঠনের শিক্ষা : শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠনের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়কে লক্ষ রাখতে হবে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। 

4) মানবিক গুণাবলির বিকাশসাধন : শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক গুণাবলির বিকাশসাধনের ক্ষেত্রেও বিশ্ববিদ্যালয়কে উদ্যোগী হতে হবে। এজন্য মানববিদ্যা চর্চার জন্য পাঠক্রম প্রবর্তন করতে হবে।

5) ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষাদান : বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির যােগ্য প্রতিনিধি হয়ে উঠতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সেই মােতাবেক পাঠক্রম প্রস্তুত করতে হবে।

6) বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-কৃষির প্রসার : নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য রক্ষা, গ্রামীণ বিকাশ, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাফল্য পেতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-কারিগরিবিদ্যা-চিকিৎসাবিদ্যার মতাে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

7) প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদের সদ্ব্যবহার : অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদের পাশাপাশি ভারতবর্ষ মানবসম্পদেও সমৃদ্ধ। প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগানাের উপযােগী মানবশক্তি অর্থাৎ দক্ষ যুবশক্তি গড়ে তােলার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়কে নিতে হবে। প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদের সদ্ব্যবহার ছাড়া দেশের উন্নতি সম্ভব নয়।

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন তথা রাধাকৃষ্ণন কমিশন উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য বিষয়ে যেসব সুপারিশ করেছিল তা অত্যন্ত প্রগতিশীল ও যুগােপযােগী।
Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box