বাংলায় শিশুশিক্ষার প্রসারে ছাপাখানার কী ভূমিকা ছিল?
ভূমিকা: অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ঊনবিংশ শতকের প্রথম ভাগের মধ্যে ছাপাখানার ব্যাপক প্রসার ঘটে। ছাপাখানার প্রসার বাংলার
উত্তর – বাংলায় শিশুশিক্ষার প্রসারে ছাপাখানার ভূমিকা
ভূমিকা: অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ঊনবিংশ শতকের প্রথম ভাগের মধ্যে ছাপাখানার ব্যাপক প্রসার ঘটে। ছাপাখানার প্রসার বাংলার শিশুশিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- শিশুশিক্ষা-বিষয়ক বইপত্র প্রকাশ: বাংলায় ছাপাখানার প্রসারের ফলে এইসব ছাপাখানায় মুদ্রিত হয়ে শিশুশিক্ষা-বিষয়ক বিভিন্ন বইপত্রের হাজার হাজার কপি সুলভে বাংলার গ্রামেগঞ্জে পৌঁছে যায়। বাংলার শিশুদের মধ্যে সহজে প্রাথমিক শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন গ্রন্থকার শিশুশিক্ষা-বিষয়ক বইপত্র রচনা করেন।
- প্রাথমিক উদ্যোগ: বাংলার শিশুশিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে শ্রীরামপুর মিশন প্রণীত ‘লিপিধারা’ (১৮১৫ খ্রি.), রাধাকান্ত দেব রচিত ‘বাঙ্গালা শিক্ষাগ্রন্থ’ (১৮২১ খ্রি.), স্কুল বুক সোসাইটি কর্তৃক দুই খণ্ডে প্রকাশিত ‘বর্ণমালা’ (সম্ভবত ১৮৫৩-৫৪ খ্রি.), ক্ষেত্রমোহন দত্ত কর্তৃক দুই খণ্ডে রচিত ‘শিশুসেবধি’ (১৮৫৪ খ্রি.) প্রভৃতি ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে এইসব বই খুব একটা জনপ্রিয়তা পায়নি।
- মদনমোহন তর্কালঙ্কার: বাংলায় শিশুশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে মদনমোহন তর্কালঙ্কার ‘শিশুশিক্ষা’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। প্রকাশের পর সেটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভের ফলে ‘শিশুশিক্ষা’র প্রথম ভাগ ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে, ‘শিশুশিক্ষা’র দ্বিতীয় ভাগ ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে এবং পরবর্তীকালে এর তৃতীয় ভাগ ও ‘বোধোদয়’ শিরোনামে চতুর্থ ভাগ প্রকাশিত হয়। ‘শিশুশিক্ষা’ বাংলার শিশুদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ‘শিশুশিক্ষা’-কে বাংলার প্রথম ‘প্রাইমার’ বলা হয়।
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর : শিশুদের বর্ণশিক্ষা ও শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে দুই খণ্ডে ‘বর্ণপরিচয়’ গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। এটি শীঘ্রই ‘শিশুশিক্ষা’র জনপ্রিয়তাকে অতিক্রম করে যায়। দুই পয়সা মূল্যের পাতলা এই বইটি বাংলার শিক্ষাজগতে এক যুগান্তকারী অগ্রগতি ঘটায়।
- রামসুন্দর বসাক : রামসুন্দর বসাক ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে ‘বাল্যশিক্ষা’ নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এটি পূর্ববঙ্গের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সহজপাঠ’ নামক শিশুশিক্ষা-বিষয়ক একটি বই লেখেন। এটিও শিশুশিক্ষার প্রসারে যথেষ্ট অবদান রাখে। পশ্চিমবঙ্গের নানা বিদ্যালয়ে এই বইটি পাঠ্য বইরূপে স্বীকৃত ছিল।
উপসংহার: ছাপাখানাগুলিতে শিশুদের জন্য মুদ্রিত বইগুলি বাংলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং শিশুশিক্ষার বিস্তারে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার আগে এই অগ্রগতির মোটেই সম্ভাবনা ছিল না।