শিক্ষার প্রসারে উইলিয়াম কেরি ও শ্রীরামপুর মিশনের অবদান কী?
ভূমিকা: খ্রিস্টান মিশনারি উইলিয়াম কেরি ভারতে আসার আগে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা মূলত উচ্চসমাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। উইলিয়াম কেরি বাংলায় এসে শ্রীরামপুরে
উত্তর – শিক্ষার প্রসারে উইলিয়াম কেরি ও শ্রীরামপুর মিশনের ভূমিকা
ভূমিকা: খ্রিস্টান মিশনারি উইলিয়াম কেরি ভারতে আসার আগে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা মূলত উচ্চসমাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। উইলিয়াম কেরি বাংলায় এসে শ্রীরামপুরে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কেরির উদ্যোগে শ্রীরামপুর মিশন বাংলায় গণশিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
- ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা : উইলিয়াম কেরি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এই ছাপাখানা থেকে বাইবেল, রামায়ণ, মহাভারত-সহ বিভিন্ন প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ ও পাঠ্যপুস্তক প্রকাশিত হয়ে সুলভে গ্রামগঞ্জের সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হতে থাকে।
- বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা : কেরি সাহেবের উদ্যোগে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শ্রীরামপুর ও তার নিকটবর্তী অঞ্চলে ৬,৭০৩ জন ছাত্র নিয়ে ১০৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। শ্রীরামপুর মিশন বাংলায় প্রথম মহিলা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে নারীশিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- কলেজ প্রতিষ্ঠা : উইলিয়াম কেরি ও তাঁর দুই সহযোগী সারা জীবনের সজ্জিত অর্থ ব্যয় করে শ্রীরামপুরে একটি ডিগ্রি কলেজ (১৮১৮ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল এশিয়ার প্রথম ডিগ্রি কলেজ।
- বাংলা ভাষায় শিক্ষার প্রসার: কেরি সাহেব উপলব্ধি করেছিলেন, গ্রামবাংলায় গণশিক্ষার প্রসারের জন্য প্রয়োজন মাতৃভাষা তথা বাংলা ভাষায় শিক্ষাদান করা। এজন্য তিনি বাংলা ভাষার মাধ্যমে শিক্ষার প্রসারের চেষ্টা চালান।
- প্রগতিশীলতা: কেরি সাহেব ভারতের প্রাচীন পিছিয়ে পড়া শিক্ষারীতির পরিবর্তে আধুনিক সাহিত্য, বিজ্ঞান, গণিত, ইতিহাস, দর্শন প্রভৃতি শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মন থেকে যাবতীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কার দূর করার চেষ্টা করেন।
উপসংহার: শিক্ষার প্রসারে উইলিয়াম কেরি ও তাঁর শ্রীরামপুর মিশনের অবদান অসামান্য। গবেষক বিশাল মঙ্গলবাদী তাঁর ‘উইলিয়াম কেরির অবদান নামক গ্রন্থে লিখেছেন যে, যে সকল ধর্মযাজক নিজেদের সুবিধার জন্য জনগণকে সত্যান্বেষণের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করতেন, উইলিয়াম কেরি সেই যাজকদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে মানুষকে আত্মিক শক্তি দিলেন।