ছাপার কাজে আধুনিক বাংলা অক্ষর বা হরফ নির্মাণের অগ্রগতির বিবরণ দাও।

ভূমিকা: অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে ইউরোপের খ্রিস্টান মিশনারিদের উদ্যোগে বাংলায় ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা ও প্রসার ঘটে এবং বাংলা ভাষায় বিভিন্ন বইপত্রের প্রকাশ শ
উত্তর – আধুনিক বাংলা অক্ষর বা হরফ
ভূমিকা: অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে ইউরোপের খ্রিস্টান মিশনারিদের উদ্যোগে বাংলায় ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা ও প্রসার ঘটে এবং বাংলা ভাষায় বিভিন্ন বইপত্রের প্রকাশ শুরু হয়। বাংলা ভাষায় বই ছাপার প্রয়োজনে এই সময় আধুনিক বাংলা হরফের উদ্ভব এবং তার নানা বিবর্তন ঘটে।
  1. চার্লস উইলকিনস-এর উদ্যোগ : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী চার্লস উইলকিনস ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার চুঁচুড়ায় একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে ছাপার কাজের প্রয়োজনে তিনি সর্বপ্রথম বাংলা অক্ষর বা হরফের টাইপ বা নকশা তৈরি করেন। তবে সেই সমস্ত অক্ষরগুলি ছিল অত্যন্ত সাধারণ বা নিম্নমানের।
  2. পঞ্চানন কর্মকারের উদ্যোগ : চার্লস উইলকিনস-এর পরবর্তীকালে সুদক্ষ স্বর্ণশিল্পী পঞ্চানন কর্মকার উন্নত বাংলা অক্ষরের ছাঁচ বা টাইপ তৈরি করেন। তাঁকে বাংলা টাইপের জনক বলা হয়। তাঁর তৈরি করা টাইপেই শ্রীরামপুর মিশনের ছাপাখানায় বাংলা ভাষায় বিভিন্ন ছাপার কাজ শুরু হয়।
  3. মনোহর কর্মকারের উদ্যোগ : পঞ্চানন কর্মকার অক্ষরের টাইপ তৈরির কৌশল তাঁর জামাতা মনোহর কর্মকারকে শিখিয়ে যান। ফলে পরবর্তীকালে মনোহর বাংলা অক্ষর তৈরিতে খুবই দক্ষতার পরিচয় দেন এবং আরও উন্নত বাংলা অক্ষর বা হরফ তৈরি করেন।
  4. সুরেশচন্দ্র মজুমদারের উদ্যোগ: পঞ্চানন কর্মকারের পর সুরেশচন্দ্র মজুমদার বাংলা টাইপ বা অক্ষর তৈরিতে আরও দক্ষতার পরিচয় দেন। তিনি ‘লাইনো টাইপ’ নামক আরও উন্নত এক ধরনের বাংলা অক্ষর বা টাইপ তৈরি করেন।
উপসংহার: চার্লস উইলকিনস সাহেবের হাত ধরে বাংলা অক্ষর বা হরফ বা নকশার যাত্রা শুরু হলেও পঞ্চানন কর্মকার ও তাঁর জামাই মনোহর কর্মকারের দক্ষতায় তা অনেক বেশি মার্জিত হয়। পরে সুরেশচন্দ্র মজুমদারের ‘লাইনো টাইপ’ পদ্ধতি নিঃসন্দেহে বাংলা অক্ষরকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়।
Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box